Tagged! ফরওয়ার্ড ব্লক সুভাষের অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল কংগ্রেসের মধ্যে একটি বামপন্থী সংগঠন তৈরি করা , যার মধ্যে সমস্ত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এবং progressive minded নেতারা একটি ন্যূনতম পরিযোজনার ভিত্তিতে যোগদান করতে পারে । কলকাতায় ১৯৩৯ সালের একটি অনুপচারিক বৈঠকে কংগ্রেসের সোশ্যালিস্ট সদস্য এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের মধ্যে ঠিক হয় যে এই পরিকল্পিত বামপন্থী ব্লক তৈরি করতে কোনোরকম বিলম্ব করা হবেনা । এবং গঠিত নতুন ব্লকের নাম দেওয়া হবে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ । কংগ্রেসের অন্যান্য ক্ষেত্রের অসংগঠিত কর্মীবৃন্দ ও অন্যান্য সোশ্যালিস্ট সদস্যেরা অনায়াসে এই নতুন পার্টিতে যোগ দিতে পারবে । ইতিমধ্যে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ‘Congress Socialist Party’ বলে একটি সংগঠন ছিল যেখানে জয়প্রকাশ নারায়ণ , অশোক মেহতা , অচ্যুত পটবর্ধন , মিনু মাসানিদের মত উচ্চশিক্ষিত তরুণ তুর্কী ও কংগ্রেসের উচ্চ সারির কিছু নেতা এই সংগঠনকে পরিচালনা করছিলেন । এনাদের প্রধান কাজ ছিল দেশের তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ের কাছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী , গণতন্ত্র ও সোশ্যালিজম (socialism) এর মূলবাণী পৌঁছিয়ে দেওয়া । সেই মুহূর্তে গান্ধী ও নেহেরুর থেকে ভারতবর্ষের সমসাময়িক অবস্থান সম্পর্কে যদি আর কেউ বেশী অবগত থেকে থাকেন , তাঁর নাম ছিল সুভাষ চন্দ্র বসু । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে যখন সারা পৃথিবী উত্তাল , ব্রিটিশরা যুদ্ধ বিগ্রহে জরাজীর্ণ , তখন সুভাষের পরিকল্পনা ছিল বৃহত্তর জনজাগরণের মাধ্যমে ব্রিটিশকে ভারত থেকে উৎখাত করা । কিন্তু তা সম্ভব হলনা, বাধ সাধল গান্ধীজীর একরোখা যুক্তি , অহিংস আন্দোলন । নেতাজীর আশা ছিল ‘Congress Socialist Party’ , ‘Forward Bloc’ এর সাথে মিশে যাবে এবং কংগ্রেসের প্লাটফর্মে non socialist radical আর progressive সদস্যেরা একত্রিত হবে । যেকোনো মূল্যে স্বাধীনতা অর্জন করাই আশু কর্তব্য বলে মনে করতেন নেতাজি সুভাষ । তৎকালীন সময়ে কংগ্রেসই ছিল একমাত্র দল যে কিনা স্বাধীনতার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারে । তাই তিনি ‘Forward Bloc’ এর সামনে দুটি পথ স্থির করে দিলেন । প্রথম , ‘Forward Bloc’ এর মাধ্যমে পুনরায় কংগ্রেসের মধ্যে বিপ্লবী কাজকর্ম ফিরিয়ে আনা । দ্বিতীয় , সারা দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলনের জন্য কংগ্রেসকে প্রস্তুত করা এবং সর্বশেষ লক্ষ্য থাকবে কংগ্রেসকে এইসব প্রকল্প গ্রহণ করতে বাধ্য করা । ১৯৩৯ সালের মে মাসে কংগ্রেসের মধ্যে ‘Forward Bloc of Indian National Congress’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল । সুভাষের লক্ষ্যই ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম আরও বৃহত্তর ও সর্বব্যাপী করে তোলা । সেইক্ষেত্রে দরকার হলে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে যারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাদের সাথে আরও বেশী করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা । সারা বিশ্বের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ১৭৭০ সালে আমেরিকার সৃষ্টি লগ্নে ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করার জন্য সেখানকার অধিবাসীরা তখন ফ্রান্সের সাথে হাত মিলিয়েছিল । লেনিন রাশিয়ার জারেদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জার্মানির সাহায্য নিয়েছিলেন । সুভাষের ইচ্ছা ছিল জমিদার প্রথা বিলোপ , কৃষি শিল্পের অগ্রগতি , রাজ্যের উদ্যোগে একটি আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোর কেন্দ্রীয়করণ । আজ দীর্ঘ ৭৫ বছর পরেও বর্তমান ভারতের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে সুভাষের চিন্তা ভাবনা একান্তভাবে প্রাসঙ্গিক ।

Posted: February 10, 2014 in Uncategorized

Leave a comment